সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নস্টালজিয়া

৯০ এর দশকে যাদের জন্ম, তাদের শৈশব কেমন ছিল এসব ভেবে নস্টালজিক হওয়ার এক রকম চেষ্টা আমাদের মাঝে খুব হয় আজকাল। 
আমি তাই মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই যে আমার তো এত সুন্দর শৈশব পাওয়ার কথা ছিল না।
আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের বাসায় ডিশের লাইন ছিল না। আমিও তেমন কিছু জানতাম না, আব্বু আম্মুও ভারতের কয়টা চ্যানেল এই দেশে চলে জানতো না। ভর্তি পরীক্ষার আগে ঢাকাও আমার বেড়ানো হয়েছিল মোটে ২ দিন মাত্র। কিন্তু ক্লাস থ্রি-তে থাকতেই আম্মুর হাত ধরে হ্যারি পটারের বইগুলো পড়া শুরু করেছি। জুরাসিক যুগে যেসব ডাইনোসর পাওয়া যেত, তার কোনটা টি-রেক্স আর কোনটা স্টেগোসরাস আমি ছবি দেখলেই বলে দিতে পারতাম যখন কিনা ক্লাস ফোর ফাইভে পড়ি। আমি না হয় এখন জানি হ্যারি পটারের বইয়ের পাতায় পাতায় কি উত্তেজনা লুকিয়ে ছিল সেই বয়সে, কিন্তু আমার আম্মু তো জানেই না এই বইগুলোর কত কিছু উপভোগ করা হয়নি তাঁর। আর আব্বুর পুরোনো বই ঘেটে ঘেটে স্পুটনিক ১ এর উৎক্ষেপনের গল্প পড়েছি। ভয়েজার ১ বেশিদূর পাড়ি দিয়েছে নাকি ভয়েজার ২ বেশি সেই গল্প জেনেছি। জোয়ান অফ আর্ক এর গল্প পড়েছি। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে একটা দেশ ছিল, অদ্ভুত সেই দেশের নাম জেনে অবাক হয়েছি। আমার জন্মের মাত্র বছর চারেক আগে একটা দেশ ভেঙে ১৬টা দেশের জন্ম হয়েছিল জেনে শিহরিত হয়েছি।
 মানচিত্রের একটা বই ছিল বাসায়, সেটার পাতা উল্টাতাম আর খালি অবাকই হতাম। দেশ মহাদেশের মানচিত্র আঁকা ছিল। নদী আর মালভূমি ছিল। কোন দেশে কি খনিজ ছিল, আমাদের কি আছে আর কোনটা নেই, মানে অদ্ভুত সব জিনিস নিয়ে ঘেটে বিকালগুলো কেটে যেত। যুগোস্লাভিয়া নামে একটা দেশ ছিল সেটা এখন নেই। চেকোস্লোভাকিয়াও নেই! তবুও ধরেই নিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে পা রেখে দেখব আমি খুবই পিছিয়ে থাকা একজন। মফস্বলে বড় হওয়া আমরা যারা আছি, তারা স্বভাবতই একটু কেমন জানি বেখেয়ালি হয় বলে আমি জানি। কাজেই ভাবতাম যে ঢাকা এসে বোধহয় সবার সুন্দর সুন্দর ছোটবেলার গল্পই শুধু শুনবো আর আফসোস করব- আহা আমার তো কিছুই করা হয়নি, দেখা হয়নি, জানা হয়নি। 
কিন্তু এখানে এসে যত বেশি মানুষের সাথে মিশছি, অবাক হই আর মনে হয় আসলে আমি বা আমরা কত ভাগ্যবান যে আমরা বড় হওয়ার জন্য কত সুন্দর একটা পরিবার আর পরিবেশ পেয়েছি। বেশির ভাগ মানুষের সাথেই কথা বললে মনে হয় এরা শূণ্য একটা শৈশব নিশ্চয়ই পেছনে ফেলে এসেছে, নইলে এত রুক্ষতা, এত ক্ষুদ্রতা পেল কোথায়? আমি হয়তো আমার কথাই বলছি শুধু, কিন্তু আমি জানি আমার পরিচিত ভাই বোন আর বন্ধুরাও এভাবেই একটা দারুণ শৈশব পেয়েছে। আমাদের ছোটবেলাটা হয়তো একরকম ছিল বলেই এখনো এত পরে এসে কারো কারো সাথে পরিচয় হয়ে কোথায় যেন মনেরও একটা মিল হয়ে যায়। 
বুধবার বিকালের জুমানজি, বৃহস্পতিবারে সামুরাই এক্স, আর রবিবার হলে উডিউডপেকার, মঙ্গলবারে গডজিলা। সেই উন্মাদনাগুলো কি আর এখনের ফেসবুক ইন্সটাগ্রামে আছে? ইউটিউবে সুপার মারিও গেম এর শুরু হওয়ার টিউনটা আমি মাঝে মাঝে শুনি। আমার মনে হয় আমি ক্লাস ফোর ফাইভে ফিরে গেছি। ঠিক যেন ঐ সন্ধ্যাগুলোতেই ফিরে যাই, যেদিন মাগরিবের আজানের পর আব্বুকে অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে রাজি করিয়ে দুইজনে সি কে ঘোষ রোডের টিভি ভিসিডি আর অডিও ক্যাসেট বিক্রি করে এমন দোকানে যেতাম। নিনটেন্ডোর কনসোলের জন্য ভিডিওগেম কিনতাম। কোটি টাকার হাসি নিয়ে বাসায় ফিরে আসতাম।

কন্ট্রা কিংবা বাম্বলবি কিভাবে খেলতে হত এসব ভিডিও এখন দেখলে ছোটবেলাটা খুব মনে পড়ে। ক্লিন শেভ করে ফেললে কালকে সকালেই জানি চেহারায় বাচ্চাবাচ্চা ভাবটা আবার ফিরে আসবে। কিন্তু দিনগুলো আসলে অনেক দূরে ফেলে আসা হয়ে গেছে...🖤

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গ্যাস জায়ান্ট বৃহস্পতি কিংবা শনিগ্রহে কি পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব?

প্রথমেই, উত্তরটি হবে না। মহাকাশে যাওয়ার প্রথম শর্ত হল স্পেস স্যুট ব্যবহার করা, যাতে করে গ্রাভিটি আর বায়ুচাপের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া যায়। অক্সিজেন সাপ্লাই আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেরও ব্যাপার আছে। কিন্তু গ্রহটি যদি হয় "গ্যাস জায়ান্ট", তবে ভাবতে হবে অন্যভাবে! আমরা জানি সৌরজগতে বর্তমানে স্বীকৃত গ্রহের সংখ্যা ৮টি (প্লুটোকে সম্ভবত আবার গ্রহের বিবেচনায় আনা হয়েছে), সে যাই হোক, সৌর জগতের গ্রহগুলো দুই ধরণের, একদল হল "রক-সলিড" বা পাথুরে গ্রহ, যেমন বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, আর আরেক দল হল "গ্যাস-জায়ান্ট" বা গ্যাসীয় গ্রহ। পাথুরে গ্রহের মত গ্যাস জায়ান্টে কোন সার্ফেস বা মাটি নেই। আমরা পৃথিবী বা মঙ্গলে দাঁড়াতে পারি, কিন্তু বৃহস্পতি কিংবা শনিতে তা সম্ভব না। সূর্য থেকে দূরত্ব অনেক বেশী হওয়ায় গোল্ডিলোক্স সীমার পরের এই গ্রহগুলোয় তাপমাত্রা অত্যন্ত কম। খুবই ঠান্ডা এই গ্রহগুলোর মূল উপাদানই হল হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন। তাপমাত্রা কম হওয়ায় গ্যাস গুলো খুব ঘন অবস্থায় থাকে, এরকম, যেন ঠিক তরলও না, পুরোপুরি বায়বীয়ও না। তাই বৃহস্পতিতে যদি আপনি কখনো মহাকাশযানে পাড়ি দিয়ে ভ্রমনের ইচ্ছ

মোবাইলে কিংবা কম্পিউটারে, এস্ট্রোনমির জগতে বিচরণ হোক চুটিয়ে!

এস্ট্রোনমি বা জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে অনেকেই আগ্রহী। বই পড়ে কিংবা ইন্টারনেট আপনার আকাঙ্খা বাড়িয়ে দেয় হয়তো, কিন্তু ঠিক পুরোপুরি তৃপ্তি অনেকেই পান না। জোতির্বিদ্যা নিয়ে আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। তবে এটি আমার পছন্দের বিষয়ের একটি... আসলে মহাকাশ নিয়ে ভাবতে গেলে প্রথমেই যেটা মনে হয়, ইশ, আমার যদি একটা টেলিস্কোপ থাকত!  একটা টেলিস্কোপ আপনি চাইলে কিনতেই পারেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে টেলিস্কোপ আনিয়ে নিতে গেলে শিপিং চার্জ ছাড়া খরচ হবে ৩৫ হাজার কিংবা তারও বেশী। বাংলাদেশেই তৈরী টেলিস্কোপও পাওয়া যায়। ঢাকায় স্টেডিয়ামের আশে পাশের দোকানে নাকি ৮-১০ হাজার টাকায় কাঠের ফ্রেমে টেলিস্কোপ পাওয়া যায়। এগুলো ঠিক কিরকম কাজ করবে সে ব্যাপারে কোন ধারণা দিতে পারছি না। যতদূর জানি, অন্তত শনি গ্রহের বলয় আপনি বেশ স্পষ্টই দেখতে পারবেন। তবে যারা আপাতত টাকা-পয়সা খরচে দ্বিধায় আছেন, তাদের জন্যই আমার এই পোস্ট! কথা না বাড়িয়ে কাজের কথায় আসি। প্রথমেই যে এপ্লিকেশনটির কথা বলব, সেটি এন্ড্রয়েডের জন্য। Google Sky Map, বলে নেয়া ভাল এটির আর কোন আপডেট গুগল এখন দেয় না। তবে আপনার ফোনের